অবর্ণনীয়
-সুবিনয় হালদার
তোমাদের মত আমাদেরও জন্ম ঈশ্বরের হাতে।
তোমার মুখগহ্বর হতে বেড়িয়ে আসা প্রথম এবং শেষ ধ্বনি আমি।
জীবনচক্রে গোলকধাঁধা’র ভিত্তিস্থাপন আমার দ্বারা পরিচালিত হয়!
পেঁচা ইঁদুর সিংহ বরাহ হয়ে বীণা’র সুরে ময়ূরপুচ্ছ মেলে নটরাজ হয়ে তোমরা সুন্দরের পূজারী হবে;
নাকি কলি’র উগ্রকণ্ঠ তোমাকে গ্রাস করবে সেটাও আমরা ঠিক করি!
জন্মলগ্ন হতে’ই তোমরা কেবল আমাদেরকে ব্যবহার করেছো-
কখনো কাণ্ডজ্ঞানহীন ভাবে কখনো বা ভদ্র নম্র সুশিক্ষিত ভাবে;
যদিও বা সেখানেও তোমাদের স্বার্থ অবগত করে!
এতকাল কলুর বলদের ন্যায় স্বজাতি এবং তারকা সেবায় নিয়জিত-
বিনা প্রতিবাদে অসন্তোষে! কারণ আমাদের ঈশ্বর কেবল ভিন্ন-ভিন্ন বর্ণে বিভক্ত করে রেখেছে-
তোমাদের’ই চরিত্রে আলোর বিকাশের জন্য। তার পরিণাম হলো একজনকে ঘাড়ে করে বয়ে চলা-
মাথায় করে ঘুরে ফেরা- তা সে যতই অনিচ্ছা থাক্!
কিন্তু আমরা আর তা মেনে নেব না,
আমরা আর মুখ বুজে চুপ করে থাকবো না-
আমরা সমস্ত নিয়ম কানুন উপেক্ষা করে ব্যাকরণের Backbone ভেঙে ওই কাগজের কালি মাখা পাতা থেকে বেড়িয়ে এসে সোচ্চারে সামিল হবো-
জোর গলায় বলবো-আমার সেই দিন, সেই শৈশব ফিরিয়ে দাও-
আজ যা কিছু তোমার তা আমাদেরই দান,
অথচ আমরা কখনোই পারিনা সমস্ত বর্ণ এক হয়ে তোমাদের চাপিয়ে দেওয়া ঘৃণ্য নীতির মিথ্যা ভাষণের প্রতিবাদ করতে!
বিভাজনের গূঢ় রহস্যভেদ করে একত্রিত হয়ে তোমাদের অন্যায় অনিয়ম ধূলিসাৎ করে দিতে!
তিলেতিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি..সব জেনেশুনে-
আজ আমরা আবদ্ধ নিশ্চুপ শ্বাস প্রাণ হীন বর্ণ পরিচয়!
সবাই শুরু’তে- প্রথম মাতৃদুগ্ধের স্বাদ নিয়ে-
যেইনা একটু টলমল পদক্ষেপ শক্ত ভাবে ফেলতে শুরু করে;
ঠিক তক্ষুনি এমন বেসুরো হয়ে সবজান্তা সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে-
যে দেখেশুনে একেবারে গা রে রে করে ওঠে,
মনে হয় দিই একটা গালে সপাটে !
কই আমরা তো তা পারিনা বা করিনা !
এবার ভাবছি করবো- স্ট্রাইক- বুক-আউট, পেজ-আউট !
স্কুল Locked-Out করে তোমরা আমাদের অস্তিত্বকে প্রশ্নচিহ্নে ফেলে দিয়েছো!
ক’ কৃষি নেই কৃষকের কাজ নেই জমি নেই- সব বেদখল– ষাঁড় গুলো সব ছাড়া;
খ’ খেটে’ও ভিক্ষা করছে- খুঁটি নড়বড় করছে এতো সব হচ্ছে জেনে’ও তবু গ’- গাঁট বাঁধছে!
ভ’ এর পেটে ভাত নেই- ভোঁদড় এবং এফোঁড় ওফোঁড়’রা সব ফাঁক করে জীবনটাকে তেঁতো করে দিচ্ছে আর কিছু ভোঁতা সেগুলো ঢোঁকঢোঁক করে অমৃত সহকারে গিলে কাঁই-কাঁই করছে!
ম’ মজুর কপাল চাপড়াচ্ছে- মৃত্যু’র সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আর বাঁদররা বাঁদরামো করেই যাচ্ছে,
হ’ হেঁটে-হেঁটে হোঁচট খেয়ে হাঁটু বরবাদ- ওদিকে হাঁড়ি ফাঁকা-
অ’ আঁকা বাঁকা পথে-
শিল্প শিল্পী আর প্রভাত সব ধোঁয়াটে! ব’ বোবা- বাঁশি আর বাঁশ প্রত্যেকে নিজের তরে-
চ’ চাঁদু শিল পোতে- চাঁদ কেঁদে মরে দ’ দাঁত যন্ত্রণায় ছটফট করে!
তাই আমরা আর দুভাগে বিভক্ত থাকবোনা,
সমস্ত বর্ণ ব্যঞ্জনা সরিয়ে স্বরে স্বর মিলিয়ে কেবলমাত্র একটা বর্ণ’কে পাইয়ে দেবার প্রতিবাদে সামিল হবো–আওয়াজ তুলবো একত্রে।
ভাই সব- তোমরা দয়া করে চিৎকার করোনা-
আমার কথাটা শোনো একবার ,
দেখ আমি তোমাদেরই একজন- যাকে বলে একেবারে আপনজন!
হ্যাঁ মানছি- আমি তোমাদের জীবিতাবস্থাতে ঘাড়ে মাথা’য় চড়ে ঘুরি কিন্তু কখনো কী ভেবে দেখেছো পরবর্তী সময়ে মানে মৃত্যু’র সাথে-সাথে আমি’ই একক এবং অদ্বিতীয়! তোমারদের ছেড়ে সকলে চলে যায়- ভুলে যায় কিন্তু আমি ভুলিনা–
এবং ছেড়ে চলেও যাইনা;
আমি থাকি সদাসর্বদা’ই তোমার নামের আগে– ৺তোমার সাথে-সাথে ৺।
Khub valo hoyeche
খুব ভালো